"আমি যা কিছু অর্জন করেছি, সবই হয়তো কপাল বা ভাগ্যের জোর। আমি আসলে এতটা যোগ্য নই।"

এই ধরণের অনুভূতির নাম ইমপোস্টার সিনড্রোম (Imposter Syndrome)—এটা শুধু একটা অনুভূতি নয়, বরং একটা মানসিক প্যাটার্ন, যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রতিদিনের জীবন ও কর্মক্ষেত্রে ব্যথিত করে তুলছে।


ইমপোস্টার সিনড্রোম কী?

ইমপোস্টার সিনড্রোম হলো এমন একটি মানসিক অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি তার সাফল্য, অর্জন বা সক্ষমতাকে বিশ্বাস করতে পারেন না। তিনি মনে করেন—তিনি আসলে অযোগ্য, এবং একদিন সবাই বুঝে যাবে যে তিনি “ভুয়া” বা “প্রতারক”।

 প্রথম প্রবর্তন:

এই টার্মটি প্রথম ব্যবহার করেন Pauline R. Clance এবং Suzanne A. Imes ১৯৭৮ সালে। তাদের গবেষণায় দেখা যায়, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত ও সফল নারীরা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন।


লক্ষণসমূহ: আপনি ইমপোস্টার সিনড্রোমে ভুগছেন কিনা বুঝবেন যেভাবে

✅ নিজের সাফল্যের পেছনে নিজেকে নয়, বরং ‘ভাগ্য’ বা ‘সময়’কে কৃতিত্ব দেওয়া
✅ অন্যদের তুলনায় নিজেকে সবসময় কম যোগ্য মনে করা
✅ ভুলভ্রান্তিকে নিজের ব্যর্থতার প্রমাণ মনে করা
✅ প্রশংসা গ্রহণে অস্বস্তি বোধ করা
✅ "আমি ধরা পড়ে যাব" এই ভয়


কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে?

  • শিক্ষার্থী বা নতুন কর্মজীবী
  • নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়
  • যারা উচ্চ প্রত্যাশা নিয়ে বেড়ে উঠেছে
  • যারা অতীতে কঠিন সমালোচনার শিকার হয়েছে


বিজ্ঞান কী বলছে?

Harvard Business Review (2019) এক প্রতিবেদনে জানায়, কর্মক্ষেত্রে থাকা অনেক সফল নারী ইমপোস্টার সিনড্রোমে আক্রান্ত হন, বিশেষত যেখানে তাদের মূল্যায়নের অভাব থাকে।
Journal of Behavioral Science অনুযায়ী, প্রায় ৭০% মানুষ জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে এই অনুভূতির শিকার হন।


ইমপোস্টার সিনড্রোম কেন ভয়ংকর?

🔴 আত্মবিশ্বাস কমে যায়
🔴 কাজের প্রতি অনীহা তৈরি হয়
🔴 কর্মজীবনের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়
🔴 হতাশা ও উদ্বেগ (Anxiety & Depression) বাড়ে
🔴 সম্পর্ক নষ্ট হয়—পারিবারিক ও পেশাগত উভয় ক্ষেত্রে


সমাধানের পথ — কীভাবে মুক্তি পাবেন এই মানসিক যন্ত্রণা থেকে?

১. নিজের অর্জন স্বীকার করুন

একটা "সাফল্য জার্নাল" রাখুন। প্রতিদিন নিজের ছোট ছোট অর্জন লিখুন।

২. নিজেকে তুলনা বন্ধ করুন

আপনার পথ আপনার মতো। অন্যের সফলতা দেখে হীনমন্যতায় না ভুগে, তা থেকে অনুপ্রাণিত হোন।

৩. সহজে প্রশংসা গ্রহণ করুন

কারও প্রশংসা শুনে সরাসরি বলুন—“ধন্যবাদ, আমি চেষ্টা করেছি”।

৪. একজন মেন্টরের সঙ্গে কথা বলুন

আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতেই মাঝে মাঝে একটি মেন্টর বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।

৫. পারফেকশনিজম থেকে বেরিয়ে আসুন

সব কিছু নিখুঁত হবে—এই মানসিকতা ছাড়ুন। ভুল করা শেখার একটি অঙ্গ।


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিকতা

বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষা, সামাজিক চাপ ও পরিবারিক প্রত্যাশা অনেক সময়ই ব্যক্তিকে এমন এক স্তরে নিয়ে যায় যেখানে সে নিজের মূল্য হারিয়ে ফেলে। SSC, HSC, চাকরির পরীক্ষা, বা সফলতার পরে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা—এগুলো ইমপোস্টার সিনড্রোমের একটি বিশাল উৎস।


শেষ কথা

আপনি যা অর্জন করেছেন, তা আপনার শ্রম, দক্ষতা এবং মেধার ফল। নিজের ভেতরের 'প্রতারক' কণ্ঠস্বরকে চুপ করান, এবং নিজের সত্যিকারের মূল্য উপলব্ধি করুন।

"Don’t let the fear of being found out stop you from stepping up."

আপনি যথেষ্ট। আপনি প্রমাণিত। আপনি বাস্তব।


Reference:

  1. Clance, P. R., & Imes, S. A. (1978). The Impostor Phenomenon in High Achieving Women: Dynamics and Therapeutic Intervention.
  2. Cokley, K., et al. (2015). An Examination of the Impact of Minority Status Stress and Impostor Feelings on the Mental Health of Diverse Ethnic Minority College Students. Journal of Multicultural Counseling and Development.

  3. Harvard Business Review, 2019. Stop Telling Women They Have Imposter Syndrome.

  4. American Psychological Association: Understanding Impostor Phenomenon.

  1. International Journal of Behavioral Science, Vol 12, 2017.